শিরক, একটি ভয়ংকরতম গুনাহ। ঈমান ও তাওহিদের বিপরীতে শিরকের অবস্থান। শিরকের সাথে ঈমান লালন করা অসম্ভব। নিষ্কলুষ ঈমানের শর্ত হলো, ঈমান ও আমলকে সবরকম শিরক থেকে মুক্ত রাখা। আল্লাহর নিকট সবচেয়ে ভয়ংকরতম পাপ হলো শিরক। যে পাপের সাধারণ কোনো ক্ষমা নেই। বান্দার শিরক করার অর্থ হলো নিজের প্রতি জুলুম করা। পৃথিবীতে মহান আল্লাহর দয়া ও নিয়ামত ভোগ করে তাঁর সাথেই যদি কোনো কিছু শরীক করা হয় নিঃসন্দেহে সেটি জুলুম বলে বিবেচিত হবে। তাই শিরকের পরিণতি চিরস্থায়ী জাহান্নাম। শিরক এমন এক ঘাতক মহাপাপ যা অন্য সকল আমলকেও ধ্বংস করে দেয়। এই লেখাটিতে আমরা শিরকের ভয়াবহতা নিয়ে বিস্তারিত জানবো ইনশাআল্লাহ।
শিরকের পরিচয়
‘শিরক’ এর শাব্দিক অর্থ শরীক করা, অংশিদার সাব্যস্ত করা, ভাগাভাগি করা ইত্যাদি। ইংরেজিতে (to share, participate, be partner, associate) ইত্যাদি অর্থ করা হয়। পরিভাষায়, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুকে মহান আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করা। সেটা হতে পারে বেশি কিংবা কম। মহান আল্লাহর রুবুবিয়্যাহ, উলুহিয়্যাহ ও সিফাতের সাথে ন্যুনতম অংশীদার সাব্যস্ত করাকে ‘শিরক’ বলে।
শিরকের প্রকৃতি
শিরক ভয়ংকরতম একটি গুনাহ। কবিরা গুনাহের অন্যতম। মহান আল্লাহর নিকট সবচে ঘৃণ্য ও জঘন্যতম পাপাচার হলো শিরক। শিরকের শেষ পরিণাম, পরকালে অনন্তর জাহান্নামের আজাব ভোগ করতে হবে। পৃথিবীতে মহান আল্লাহর অগণিত নিয়ামত ভোগ করে তাঁর সাথে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে অংশ হিসেবে সাব্যস্ত করা কোনোভাবেই বরদাস্তযোগ্য নয়। শিরক অন্য সৎ আমলসমূহকেও নষ্ট করে দেয় ফলে শিরকযুক্ত আমলের কোনো মূল্য নেই। এককথায় মহান আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ বিশ্বাস তথা তাওহিদের বিপরীত হলো ‘শিরক’।
জাহেলি যুগের মুশরিকরাও আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখত
মক্কার তৎকালীন কুফফার ও মুশরিকরাও আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখত। মহান আল্লাহকে তারাও আসমান জমিনের সৃষ্টিকর্তা, বিশ্বজগতের নিয়ন্তা, পালনকর্তা ইত্যাদি বলে স্বীকার করত। এরপরেও তারা মুমীন বা বিশ্বাসী বলে বিবেচিত হবে না। এর প্রমাণ আমরা পবিত্র কুরআন কারিমে পাই-
মহান আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে স্বীকৃতি
ﱡﭐ وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ لَيَقُولُنَّ خَلَقَهُنَّ الْعَزِيزُ الْعَلِيمُ ﱠ
‘তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করো, কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন? তারা অবশ্যই বলবে, মহাপরাক্রমশীল মহাজ্ঞানী আল্লাহই করেছেন।’ (সুরা যুখরুফ: ৮৭)
আসমান জমিনসহ ও অন্যান্য সৃষ্টিকর্তা হিসেবে স্বীকৃতি
﴿قُلۡ مَن يَرۡزُقُكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ أَمَّن يَمۡلِكُ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡأَبۡصَٰرَ وَمَن يُخۡرِجُ ٱلۡحَيَّ مِنَ ٱلۡمَيِّتِ وَيُخۡرِجُ ٱلۡمَيِّتَ مِنَ ٱلۡحَيِّ وَمَن يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَۚ فَسَيَقُولُونَ ٱللَّهُۚ﴾ [يونس: ٣١]
‘বলুন, কে তোমাদের আসমান ও জমিন থেকে রিজক দান করেন? অথবা কে তোমাদের শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তির মালিক? আর কে মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন আর জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন? কে সকল বিষয় পরিচালনা করেন? তখন তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ’। (সুরা ইউনুস: ৩১)
ﱡﭐ وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ ﱠ
‘আর তুমি যদি তাদের জিজ্ঞেস করো, কে আকাশমণ্ডলী ও জমিন সৃষ্টি করেছে এবং কে চন্দ্র-সূর্যকে নিয়ন্ত্রণ করছে? তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ।’ (সুরা আনকাবুত: ৬১)
ﱡﭐ وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ نَزَّلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ مِنْ بَعْدِ مَوْتِهَا لَيَقُولُنَّ اللَّهُ ﱠ
‘আর তুমি যদি তাদেরকে প্রশ্ন করো, কে আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তা দ্বারা মৃত জমিনকে জীবিত করে? তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ।’ (সুরা আনকাবুত: ৬৩)
উপরোক্ত আয়াতসমূহ থেকে স্পষ্ট প্রতিভাত হয় মক্কার তৎকালীন কাফের মুশরিকরাও আল্লাহকে সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা হিসেবে মেনে নিয়েছিল। আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ও রিজিকদাতা হিসেবে মানতে তাদের কোনো আপত্তি ছিল না।
তবুও তারা পথভ্রষ্ট
মক্কার কাফেররা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও ইবাদতের পাশাপাশি অন্য কিছুকে মহান আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করেছিল। আর এ কারণেই তাদের বিশ্বাসের কোনো মূল্য ছিল না। মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনীত দ্বীনের বিপরীতে ছিল তাদের অবস্থান। পবিত্র কুরআনে তাদের অবস্থা সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে,
﴿ وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِن دُونِهِ أَوْلِيَاء مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ﴾
‘যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্যদেরকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং বলে যে, আমরা তাদের ইবাদত এজন্য করি যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়।’ (সুরা যুমার: ৩)
মূলত তারা সেসব মূর্তি পূজা করত এই বিশ্বাস নিয়ে যে, এগুলো তাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে কিংবা আল্লাহর নিকট তাদের জন্য সুপারিশ করবে। এভাবেই তারা আল্লাহর সাথে তারা শিরক সাব্যস্ত করার কারণে পথভ্রষ্ট হয়।
পৃথিবীতে শিরকের সূচনা
পৃথিবীর প্রথম মানব, আমাদের আদি পিতা হযরত আদম আ. সঠিক দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন এবং তাঁর বংশধররাও এর উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। কিন্তু সময়ের আবর্তনে ধীরে ধীরে মানুষ বিপথগামী ও আল্লাহর পথ থেকে সরে আসতে শুরু করে। পরবর্তীতে নুহ আ. এর বংশধরদের শয়তান তাদের মধ্যকার সম্মানিত ও নিকটতম ব্যক্তিবর্গদের মূর্তি তৈরি করতে প্ররোচনা দেয়। পবিত্র কুরআনে এ ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে,
﴿ وَقَالُواْ لَا تَذَرُنَّ ءَالِهَتَكُمۡ وَلَا تَذَرُنَّ وَدّٗا وَلَا سُوَاعٗا وَلَا يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسۡرٗا ٢٣ ﴾
‘তারা বলল (নুহ আ. এর বংশধররা), তোমরা তোমাদের দেবতাদের পরিত্যাগ করো না, আর ওয়াদ্দ, সুয়া, ইয়াগুছ, ইয়াউক ও নসরকেও পরিত্যাগ করো না। (সুরা নুহ: ২৩)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, এগুলো হলো নূহ আ. এর পূর্বপুরুষদের মধ্য হতে পাঁচজন সৎ মানুষের নাম। শয়তান তাদের নিকট এসে কুমান্ত্রণা দেয় এই ব্যক্তিদের মূর্তি নির্মাণ করে তাদের নাম দিয়ে সেগুলো বৈঠকখানায় রেখে দেয়ার জন্য। শয়তানের ফাঁদে তারা সেগুলোর মূর্তি তৈরি করে। কিন্তু পরবর্তী প্রজন্ম ক্রমে সেগুলোর পূজা ও উপাসনা শুরু করে দেয়। এভাবেই পৃথিবীতে শিরকের সূচনা হয়। (বুখারী, কিতাবুত তাফসির, সুরা নুহ)
শিরকের ভয়াবহতা
শিরক ভয়ংকরতম একটি পাপ। মহান আল্লাহর নিকট সবচেয়ে জঘন্যতম পাপাচার হলো ‘শিরক’। আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ বিশ্বাস তথা তাওহিদের বিপরীত হলো ‘শিরক’। শিরকের ব্যাপারে কুরআন হাদীসে বহু ভয়াবহতার কথা এসেছে। তন্মধ্যে কিছু নিম্নে উল্ল্যেখ করা হলো।
শিরক একটি বড় জুলুম
আমরা প্রতিনিয়ত মহান আল্লাহর নিয়ামত ভোগ করে চলেছি। পৃথিবীতে তাঁর দয়ায় বেঁচে আছি। এতদসত্ত্বেও যদি তাঁর দয়া ও অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে উল্টো সেই মহান সত্ত্বার সাথে শরীক করা হয় সেটি নিজেদের প্রতিই জুলুম হবে। এজন্য শিরককে বড় জুলুম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-
﴿إِنَّ ٱلشِّرۡكَ لَظُلۡمٌ عَظِيمٞ ١٣﴾ [لقمان: ١٣]
‘নিশ্চয় শিরক বড় জুলুম।’ (লুকমান: ১৩)
সর্বোচ্চ পাপ শিরক
কবিরা গুনাহর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুনাহ হলো ‘শিরক’। ইমাম যাহাবী রচিত কবিরা গুনাহসমূহ নিয়ে অনন্য গ্রন্থ ‘আল কাবায়ির’ এ শিরককে সর্বপ্রথম উল্ল্যেখ করেছেন। নবী সা. ইরশাদ করেন-
«أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الكَبَائِرِ؟» ثَلاَثًا، قَالُوا: بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «الإِشْرَاكُ بِاللَّهِ، وَعُقُوقُ الوَالِدَيْنِ»
‘আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহের ব্যাপারে বলল না? সকলে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, অবশ্যই বলুন। আল্লাহর সাথে শিরক করা এবং পিতামাতার সাথে অবাধ্য হওয়া।’ (বুখারী: ২৬৫৪)
শিরকের পাপ আল্লাহ ক্ষমা করেন না
শিরক ভয়ংকর পাপ বলে মহান আল্লাহ শিরকের পাপকে ক্ষমা করেন না। অন্যান্য ছোটখাট ভুলত্রুটি, গোনাহসমূহ নেক আমলের দ্বারা মোচন করা হয়, কিন্তু শিরক এত জঘন্য পাপ যে এর গোনাহ তওবা ব্যতীত ক্ষমা হয় না। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ ﴾ [النساء: ٤٨]
‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করার পাপ কিছুতেই ক্ষমা করেন না। এ ছাড়া অন্যান্য পাপ তিনি যাকে ইচ্ছা করেন মাফ করেন।’ (সুরা নিসা: ৪৮)
শিরককারীর জন্য জান্নাত হারাম ঘোষণা
মহান আল্লাহ শিরকাকারী ব্যক্তি বা মুশরিক ব্যক্তির জন্য জান্নাত হারাম ঘোষণা করেছেন। মুশরিক ব্যক্তি মুসলিম মিল্লাত থেকে বেরিয়ে যায়। ঈমানের সম্পূর্ণ বিপরীত কর্ম শিরক বলে পরকালে তার জন্য চিরস্থায়ী শাস্তি নির্ধারিত। মুশরিকের চূড়ান্ত গন্তব্য হলো জাহান্নাম। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-
﴿إِنَّهُ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ ٧٢﴾ [المائدة: ٧٢]
‘নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর আল্লাহ জান্নাতকে হারাম করেছেন এবং তার বাসস্থান হলো জান্নাহাম। জালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই।’ (সুরা মায়িদাহ: ৭২)
শিরক সকল নেক আমলকে বরবাদ করে দেয়
শিরকমুক্ত ইবাদত আল্লাহর প্রাপ্য
শিরক থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ
শিরকের প্রকার
শিরক প্রধানত দু প্রকার। মহান আল্লাহর সাথে তাঁর রুবুবিয়্যাহ, উলুহিয়্যাহ ও আসমা ওয়াস সিফাতের ক্ষেত্রে অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে শিরককে দু’ভাগে ভাগ করা হয়।
প্রথমত, শিরকে আকবার বা বড় শিরক:
মহান আল্লাহর সাথে সরাসরি অংশিদার সাব্যস্ত করা, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীর উপাসনা করা, তাদের কাছে কোনো কিছু চাওয়া, দোয়া করা, অন্য কাউকে ভাল মন্দের অধিকারী বলে বিশ্বাস করা। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য মানত করা, পশু উৎসর্গ (কুরবানী) করা ইত্যাদি। মোটকথা, তাওহিদের তিনটি মৌলিক বিষয় তথা মহান আল্লাহর রুবুবিয়্যাহ, উলুহিয়্যাহ ও আসমা ওয়াস সিফাতের সাথে অন্য কিছুকে অংশিদার সাব্যস্ত করা শিরকে আকবার বা বড় শিরক যা তাওহিদের সরাসরি বিপরীত।
শিরকে আকবারের ফলে একজন ব্যক্তি ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যায়। তাকে আর মুসলিম বলার সুযোগ থাকে না। সে সুস্পষ্ট মুশরিক বলে বিবেচিত হবে এই অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে পরকালে সে ব্যক্তির আবাস চিরস্থায়ী জাহান্নাম।
দ্বিতীয় প্রকার, শিরকে আসগার বা ছোট শিরক:
এই প্রকার শিরক হলো যা শিরকে আকবার নয় এবং ইসলামের গণ্ডি থেকে বের করে দেয় না কিন্তু পবিত্র কুরআন সুন্নাহয় ‘শিরক’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই প্রকার শিরক কথা কাজের দ্বারা যেমন হতে পারে, তেমনি খুব সূক্ষ্ম বিষয়েও হয়ে যেতে পারে। শিরকে আসগারের কিছু উদাহরণ হলো-
আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে কসম করা:
হাদীসে এসেছে-
«مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللَّهِ فَقَدْ أَشْرَكَ»
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে কসম করল, সে শিরক করল।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৩২৫১)
আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে কসম করা:
হাদীসে এসেছে-
«مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللَّهِ فَقَدْ أَشْرَكَ»
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে কসম করল, সে শিরক করল।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৩২৫১)
কথার মধ্যে শিরক:
কথাপ্রসঙ্গে এমন কিছু বলা যে, আল্লাহ চেয়েছেন ও আপনি চেয়েছেন। এক ব্যক্তি রাসূল সা. কে বলল, مَا شَاءَ اللهُ وَشِئْتَ ‘আল্লাহ এবং আপনি যেমন চেয়েছেন’। এটা শুনে রাসূল রা. বললেন,
«جَعَلْتَنِي لِلَّهِ عَدْلًا، بَلْ مَا شَاءَ اللَّهُ وَحْدَهُ»
‘তুমি কি আল্লাহর সাথে আমাকে সমকক্ষ করলে? বরং বলো, একমাত্র আল্লাহ যা চান।’ (মুসনাদে আহমাদ: ২৫৬১)
গোপন শিরক:
নিছক লোক দেখানো উদ্দেশ্যে কোনো আমল বা ইবাদত করা। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে যেসব কর্ম সম্পাদিত হয় তা মানুষের বাহ্বা পাওয়া, সুনাম কুড়ানো কিংবা অন্যকে খুশী করার জন্য করা। যেমন, অন্যকে দেখানোর জন্য সালাত আদায় করা, সুললিত কণ্ঠে তেলাওয়াত করা, যিকির আযকার, তাসবীহ তাহলীল, লোকদেখানো দান সদাকা করা ইত্যাদি। এরূপ আমলের কোনো মূল্য নেই। হাদীসে এসেছে-
«إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ قَالُوا: وَمَا الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: الرِّيَاءُ»
‘আমি তোমাদের উপর যে জিনিসের ভয় সবচেয়ে বেশি করছি তা হলো, ‘শিরকে আসগর’ বা ছোট শিরক। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল সা., শিরকে আসগর কী? তিনি বললেন, ‘রিয়া’ বা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে করা আমল। (মুসনাদে আহমাদ: ২৩৬৩)
কিছু প্রচলিত শিরক
১. আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো সন্তুষ্টির জন্য ইবাদত করা।
২. আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুর নামে কসম করা।
৩. মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে বিধানদাতা হিসেবে গ্রহণ করা।
৪. আল্লাহ ব্যতীত জীবিত বা মৃত কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর জন্য মানত করা যেমন পীর, ফকির, মাজারের উদ্দেশ্যে গরু, ছাগল, মুরগী জবাই করা।
৫. আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য সিজদা দেয়া। যেমন কোনো পীর, ফকির, মাজারে মৃত মানুষকে সিজদা দেয়া।
৬. সালাত, সিয়াম, হাজ্ব, যাকাতসহ অন্যান্য নফল ইবাদত লোক দেখানো উদ্দেশ্যে পালন করা।
৭. মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে ভালমন্দের অধিকারী বলে ধারণা করা।
৮. আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট কিছু চাওয়া, দোয়া বা প্রার্থনা করা যেমন পীর, ফকির, মাজারে গিয়ে চাওয়া।
৯. মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে আলিমুল গাইব বা অদৃশ্যের খবর জানেন বলে বিশ্বাস করা। এমনকি স্বয়ং নবী সা. অদৃশ্যের খবর জানতেন না। যতটুকু আল্লাহ তা‘威而鋼
“>য়ালা জানাতেন ততটুকুই জানতেন।
১০. কোনো জ্যোতিষী বা গণকের ভাগ্য গণনার জন্য যাওয়া বা তাদের কথা বিশ্বাস করা।
১১. মানুষের কল্যাণ অকল্যাণে গ্রহ নক্ষত্রের প্রভাব আছে বলে বিশ্বাস রাখা।
১২. জাদু টোনা, বান বা শিরকি তাবিজ ঝুলানো এবং এমন বিশ্বাস রাখা যে এগুলো মুক্তি দিতে পারে ইত্যাদি।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে শিরক থেকে হেফাজত থাকার তৌফিক দিন।