মাসনুন দু’আ: জীবনকে সুরক্ষিত ও বরকতময় করার উপায়

মাসনুন দু’আ: জীবনকে সুরক্ষিত ও বরকতময় করার উপায়

দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততা আর কোলাহলের মাঝে আমরা প্রায়শই নিজেদের মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ি। কিন্তু দিনের শুরু এবং শেষে আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করা আমাদের ইমানকে দৃঢ় করে এবং সকল বিপদাপদ থেকে রক্ষা করে। নবীজি (সা.) আমাদের জন্য এমন কিছু দু’আ শিখিয়ে গেছেন, যা পাঠ করলে দুনিয়া ও আখিরাতের অগণিত কল্যাণ লাভ করা যায়।

وَاذْكُرْ رَّبَّكَ فِيْ نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَّخِيْفَةً وَّدُوْنَ الْجَــهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ وَلَا تَكُنْ مِّنَ الْغٰفِلِيْنَ

“আর আপনি আপনার রব্বকে স্মরণ করুন মনে মনে, মিনতি ও ভীতিসহকারে, অনুচ্চস্বরে; সকালে ও সন্ধ্যায়। আর উদাসীনদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না।” (সূরা আল-আ‘রাফ: ২০৫)

সকাল-সন্ধ্যার মাসনুন দু’আগুলো আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই দু’আগুলো শুধু আল্লাহর স্মরণই নয়, বরং আমাদের আত্মিক শান্তি, সুরক্ষা এবং বরকতের চাবিকাঠি। চলুন, হাদিসের আলোকে জেনে নিই কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসনুন দু’আ, যা আপনার জীবনকে আলোকিত করবে।


আয়াতুল কুরসি: সূরা আল-বাকারাহ্‌ ২৫৫

ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلۡحَيُّ ٱلۡقَيُّومُۚ لَا تَأۡخُذُهُۥ سِنَةٞ وَلَا نَوۡمٞۚ لَّهُۥ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ مَن ذَا ٱلَّذِي يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦۚ يَعۡلَمُ مَا بَيۡنَ أَيۡدِيهِمۡ وَمَا خَلۡفَهُمۡۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيۡءٖ مِّنۡ عِلۡمِهِۦٓ إِلَّا بِمَا شَآءَۚ وَسِعَ كُرۡسِيُّهُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَۖ وَلَا يَـُٔودُهُۥ حِفۡظُهُمَاۚ وَهُوَ ٱلۡعَلِيُّ ٱلۡعَظِيمُ

অর্থঃ আল্লাহ্, তিনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ্ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না, নিদ্রাও নয়। আসমানসমূহে যা রয়েছে ও যমীনে যা রয়েছে সবই তাঁর। কে সে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? তাদের সামনে ও পিছনে যা কিছু আছে তা তিনি জানেন। আর যা তিনি ইচ্ছে করেন তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কোনো কিছুকেই তারা পরিবেষ্টন করতে পারে না। তাঁর ‘কুরসী’ আসমানসমূহ ও যমীনকে পরিব্যাপ্ত করে আছে;আর এ দুটোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁর জন্য বোঝা হয় না। আর তিনি সুউচ্চ সুমহান।

যে ব্যক্তি সকালে তা (আয়াতুল কুরসি) বলবে সে বিকাল হওয়া পর্যন্ত জিন শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয়ে থাকবে, আর যে ব্যক্তি বিকালে তা বলবে সে সকাল হওয়া পর্যন্ত জিন শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয়ে থাকবে।


সবকিছুর (নিরাপত্তার) জন্য যথেষ্ট যে দোআ (সূরা ইখলাস, ফালাক্ব ও নাস)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি সকাল ও বিকালে ‘কুল হুআল্লাহু আহাদ’(সূরা ইখলাস),

قُلْ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ ١ ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ ٢ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ ٣ وَلَمْ يَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدٌۢ ٤

অর্থঃ বলঃ তিনিই আল্লাহ, একক/অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নন। তাঁর কোন সন্তান নেই এবং তিনিও কারও সন্তান নন,এবং তাঁর সমতুল্য কেহই নেই।

সূরা ফালাক,

قُلۡ اَعُوۡذُ بِرَبِّ الۡفَلَقِۙ‏ ١ مِنۡ شَرِّ مَا خَلَقَۙ‏ ٢ وَمِنۡ شَرِّ غَاسِقٍ اِذَا وَقَبَۙ‏ ٣ وَمِنۡ شَرِّ النَّفّٰثٰتِ فِى الۡعُقَدِۙ‏ ٤ وَمِنۡ شَرِّ حَاسِدٍ اِذَا حَسَدَ‏ ٥

অর্থঃ বলুন, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি ঊষার রবের। তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট হতে। ‘আর অনিষ্ট হতে রাতের অন্ধকারের, যখন তা গভীর হয়। আর অনিষ্ট হতে সমস্ত নারীদের, যারা গিরায় ফুঁক দেয়। আর অনিষ্ট হতে হিংসুকের, যখন সে হিংসা করে।

সূরা নাস,

قُلۡ اَعُوۡذُ بِرَبِّ النَّاسِۙ‏ ١ مَلِكِ النَّاسِۙ‏ ٢ اِلٰهِ النَّاسِۙ‏ ٣ مِنۡ شَرِّ الۡوَسۡوَاسِ  ۙ الۡخَـنَّاسِ ۙ‏ ٤ الَّذِىۡ يُوَسۡوِسُ فِىۡ صُدُوۡرِ النَّاسِۙ‏ ٥ مِنَ الۡجِنَّةِ وَالنَّاسِ‏ ٦

অর্থঃ বলুন, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানুষের রবের, মানুষের অধিপতির, মানুষের ইলাহের কাছে, আত্মগোপনকারী কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট হতে; যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে, জিনের মধ্য থেকে এবং মানুষের মধ্য থেকে।

…তিনবার করে বলবে, এটাই তার সবকিছুর (নিরাপত্তার) জন্য যথেষ্ট হবে।


সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার (ক্ষমা চাওয়ার শ্রেষ্ঠ দোআ)


اَللّٰهُمَّ أَنْتَ رَبِّيْ لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ،أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْت أَبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوْءُ بِذَنْبِيْ فَاغْفِرْ لِيْ فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلَّا أَنْتَ

অর্থঃ হে আল্লাহ্‌! আপনি আমার রব্ব, আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার বান্দা। আর আমি আমার সাধ্য মতো আপনার (তাওহীদের) অঙ্গীকার ও (জান্নাতের) প্রতিশ্রুতির উপর রয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আপনি আমাকে আপনার যে নিয়ামত দিয়েছেন তা আমি স্বীকার করছি, আর আমি স্বীকার করছি আমার অপরাধ। অতএব আপনি আমাকে মাফ করুন। নিশ্চয় আপনি ছাড়া আর কেউ গুনাহসমূহ মাফ করে না।

এই দু’আটি ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ উপায়। হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি দিনে দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এটি পাঠ করে এবং সন্ধ্যা আসার আগে মারা যায়, সে জান্নাতবাসী হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এটি পাঠ করে এবং সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, সেও জান্নাতবাসী হবে।


১০০ বার তাসবীহ পাঠ

سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِهِ

অর্থঃ আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করছি

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি সকাল ও সন্ধ্যায় ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ একশত বার বলবে, কিয়ামতের দিন তার চেয়ে উত্তম আমল নিয়ে আর কেউ আসবে না, তবে সে ছাড়া যে তার মতো অথবা তার চেয়ে বেশি বলেছে।”


সকল অনিষ্ট থেকে সুরক্ষার দু’আ

أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

অর্থঃ আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের ওসিলায় আমি তাঁর নিকট তাঁর সৃষ্টির ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই।

যে কেউ বিকাল বেলা এ দো‘আটি তিনবার বলবে, সে রাতে কোনো বিষধর প্রাণী তার ক্ষতি করতে পারবে না।


শয়তানের কুমন্ত্রণা ও শিরক থেকে বাঁচার দু’আ

اَللّٰهُمَّ عَالِمَ الغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ، رَبَّ كُلِّ شَيْءٍ وَمَلِيْكَهُ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ، أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِيْ، وَمِنْ شَرِّ الشَّيْطَانِ وَشِرْكِهِ، وَأَنْ أَقْتَرِفَ عَلَى نَفْسِيْ سُوءًا، أَوْ أَجُرَّهُ إِلَى مُسْلِمٍ

অর্থঃ হে আল্লাহ! হে গায়েব ও উপস্থিতের জ্ঞানী, হে আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা, হে সব কিছুর রব্ব ও মালিক! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই আমার আত্মার অনিষ্ট থেকে, শয়তানের অনিষ্টতা থেকে ও তার শির্ক বা তার ফাঁদ থেকে, আমার নিজের উপর কোনো অনিষ্ট করা, অথবা কোনো মুসলিমের দিকে তা টেনে নেওয়া থেকে।

এই দু’আটি আপনাকে নিজের নফসের খারাপি, শয়তানের অনিষ্ট এবং শিরক থেকে রক্ষা করবে।


দুনিয়া ও আখিরাতে সুস্থতার দু’আ

اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِيْ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِيْ دِيْنِيْ وَدُنْيَايَ وَأَهْلِيْ، وَمَالِيْ، اَللّٰهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِيْ، وَآمِنْ رَوْعَاتِيْ، اَللّٰهُمَّ احْفَظْنِيْ مِنْ بَينِ يَدَيَّ، وَمِنْ خَلْفِيْ، وَعَنْ يَمِيْنِيْ، وَعَنْ شِمَالِيْ، وَمِنْ فَوْقِيْ، وَأَعُوْذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِيْ

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা এবং নিরাপত্তা চাচ্ছি আমার দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার ও অর্থ-সম্পদের। হে আল্লাহ! আপনি আমার গোপন ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখুন, আমার উদ্বিগ্নতাকে রূপান্তরিত করুন নিরাপত্তায়। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হেফাযত করুন আমার সামনের দিক থেকে, আমার পিছনের দিক থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে এবং আমার উপরের দিক থেকে। আর আপনার মহত্ত্বের অসিলায় আশ্রয় চাই আমার নীচ থেকে হঠাৎ আক্রান্ত হওয়া থেকে

নবীজি (সা.) সকাল-সন্ধ্যায় এই দু’আগুলো কখনো ছাড়তেন না। এটি আপনাকে দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষমা ও সুস্থতা দেবে, আপনার পরিবার ও সম্পদকে হেফাজত করবে এবং সকল ভয় থেকে মুক্তি দেবে।


সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর অনুগ্রহের স্বীকৃতি

সকালে বলবে,

اَللّٰهُمَّ بِكَ أَصْبَحْنَا، وَبِكَ أَمْسَيْنَا، وَبِكَ نَحْيَا، وَبِكَ نَمُوْتُ وَإِلَيْكَ النُّشُوْرُ

বিকালে বলবে,

اَللّٰهُمَّ بِكَ أَمْسَيْنَا، وَبِكَ أَصْبَحْنَا، وَبِكَ نَحْيَا، وَبِكَ نَمُوْتُ، وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমরা আপনার জন্য সকালে / বিকালে উপনীত হয়েছি এবং আপনারই জন্য আমরা বিকালে / সকালে উপনীত হয়েছি। আর আপনার দ্বারা আমরা জীবিত থাকি, আপনার দ্বারাই আমরা মারা যাব; আর আপনার দিকেই উত্থিত হব।

দিনের শুরু এবং শেষ আল্লাহর নামেই হোক। এই দু’আগুলো আল্লাহর প্রতি আমাদের পূর্ণ নির্ভরশীলতা প্রকাশ করে।


১০০ বার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠের ফজিলত

لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ

অর্থঃ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর, আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।

আবূ হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন:
“যদি কেউ এক দিনে ১০০ বার উপরের বাক্যগুলো বলে তা তার জন্য দশজন ক্রীতদাস মুক্ত করার সমান হবে, তার জন্য ১০০ সাওয়াব লেখা হবে, তার ১০০ গোনাহ ক্ষমা করা হবে এবং ঐ দিনের জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত তা তাকে শয়তান থেকে সংরক্ষণ করবে। ঐ দিনে তার কর্মই সর্বোত্তম বলে গণ্য হবে, তবে যদি কেউ তার চেয়েও বেশি আমল করে তবে তা ভিন্ন কথা।”


সকল কাজে আল্লাহর সাহায্যের দু’আ

يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ أَصْلِحْ لِيْ شَأْنِيْ كُلَّهُ وَلَا تَكِلْنِيْ إِلَى نَفْسِيْ طَرْفَةَ عَيْنٍ

অর্থঃ হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী! আমি আপনার রহমতের অসীলায় আপনার কাছে উদ্ধার কামনা করি, আপনি আমার সার্বিক অবস্থা সংশোধন করে দিন, আর আমাকে আমার নিজের কাছে নিমেষের জন্যও সোপর্দ করবেন না।


রাতের শুরুতে ও দিনের শুরুতে সর্বময় ক্ষমতার স্বীকৃতি

সকালে বলবে,

أَصْبَحْنَا وَأَصْبَحَ الْمُلْكُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ خَيْرَ هٰذَا الْيَوْمِ فَتْحَهُ، وَنَصْرَهُ، وَنُوْرَهُ، وَبَرَكَتَهُ، وَهُدَاهُ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا فِيْهِ وَشَرِّ مَا بَعْدَهُ

বিকালে বলবে,

أَمْسَيْنَا وَأَمْسَى الْمُلْكُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ خَيْرَ هٰذِهِ اللَّيْلَةِ :فَتْحَهَا، وَنَصْرَهَا، وَنُوْرَهَا، وَبَرَكَتَهَا، وَهُدَاهَا، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا فِيْهَا وَشَرِّ مَا بَعْدَهَا

অর্থঃ আমরা আল্লাহর জন্য সকালে/ বিকালে উপনীত হয়েছি, অনুরূপ যাবতীয় রাজত্বও সকালে /বিকালে উপনীত হয়েছে, আল্লাহ্‌র জন্য। সমুদয় প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসাও তাঁর, আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। হে রব্ব! এই দিনের / রাতের মাঝে এবং এর পরে যা কিছু কল্যাণ আছে আমি আপনার নিকট তা প্রার্থনা করি। আর এই দিনের / রাতের মাঝে এবং এর পরে যা কিছু অকল্যাণ আছে, তা থেকে আমি আপনার আশ্রয় চাই। হে রব্ব! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই অলসতা ও খারাপ বার্ধক্য থেকে। হে রব্ব! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই জাহান্নামে আযাব হওয়া থেকে এবং কবরে আযাব হওয়া থেকে।


আল্লাহ, ইসলাম ও রাসূল (সা.)-এর প্রতি সন্তুষ্টির দু’আ

رَضِيْتُ بِاللّٰهِ رَبًّا، وَّبِالْإِسْلاَمِ دِينًا وَّبِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَبِيًّا

অর্থঃ আল্লাহকে রব, ইসলামকে দীন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নবীরূপে গ্রহণ করে আমি সন্তুষ্ট।

এই দু’আটি প্রতিদিন তিনবার পাঠ করলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তাকে সন্তুষ্ট করে দেবেন।


আকস্মিক বিপদ থেকে সুরক্ষার দু’আ

بِسْمِ اللّٰهِ الَّذِيْ لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ

অর্থঃ আল্লাহ্‌র নামে; যাঁর নামের সাথে আসমান ও যমীনে কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। আর তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।”

এই দু’আটি তিনবার পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত এবং সকালে তিনবার পাঠ করলে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো আকস্মিক বিপদ আসবে না।


দুনিয়া ও আখেরাতের সকল চিন্তাভাবনার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট হবেন

حَسْبِيَ اللّٰهُ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ

অর্থঃ আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আমি তাঁর উপরই ভরসা করি। আর তিনি মহান আরশের রব্ব।

যে ব্যক্তি দো‘আটি সকালবেলা সাতবার এবং বিকালবেলা সাতবার বলবে তার দুনিয়া ও আখেরাতের সকল চিন্তাভাবনার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট হবেন।


আল্লাহর সৃষ্টির পরিমাণ অনুযায়ী তাসবীহ পাঠ

سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ، وَرِضَا نَفْسِهِ، وَزِنَةَ عَرْشِهِ، وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ

অর্থঃ আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি— তাঁর সৃষ্ট বস্তুসমূহের সংখ্যার সমান, তাঁর নিজের সন্তোষের সমান, তাঁর আরশের ওজনের সমান ও তাঁর বাণীসমূহ লেখার কালি পরিমাণ (অগণিত অসংখ্য)

উম্মুল মুমিনিন জুওয়ায়রিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) প্রত্যূষে তাঁর নিকট থেকে বের হলেন। যখন তিনি ফজরের সালাত আদায় করলেন তখন তিনি সালাতের জায়গায় ছিলেন। এরপর তিনি –দুহা’র পরে ফিরে এলেন। তখনও তিনি বসেছিলেন। নবী (সা) বললেন, আমি তোমাকে যে অবস্হায় রেখে গিয়েছিলাম তুমি সেই অবস্হায়ই আছো? তিনি বললেন, হ্যা। তখন নবী (সা) বললেনঃ আমি তোমার নিকট থেকে যাওয়ার পর চারটি কালেমা তিনবার পাঠ করেছি। আজকে তুমি এ পর্যন্ত যা বলেছ তার সাথে ওযন করলে এই (উপরিউক্ত) কালেমা চারটির ওযনই বেশী হবে।


এই দু’আগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গী হোক। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় এই দু’আগুলো পাঠের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে আল্লাহর রহমত ও সুরক্ষার চাদরে আবৃত করতে পারি। এই ছোট ছোট আমলগুলোই আমাদের ইহকাল ও পরকালকে সুন্দর করতে সাহায্য করবে।

আপনার দিন ও রাত আল্লাহর জিকিরে বরকতময় হোক! এই পোস্টটি পড়ার পর যদি মনে হয়, দুয়ার একটি এপ মোবাইলে থাকলে পড়তে সহজ হত, তাহলে ডাউনলোড করে নিতে পারেন হিসনুল মুসলিম এন্ড্রয়েড এপটি অথবা দোআ ও যিকির আইওএস এপটি। দাওয়াতের নিয়তে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আর্টিকেলটি শেয়ার করার অনুরোধ রইলো।

Facebook
Twitter
LinkedIn

সম্পর্কিত পোস্ট